
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অনেক ছোট একটি দেশে বিপুল জনশক্তি নিয়ে আমরা চলছি। কেউ যদি বলে থাকেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশে কোন উন্নয়ন হয়নি, আমি তার সঙ্গে একমত হবে না। তবে যতটুকু উন্নয়নের সম্ভাবনা ছিল, বিগত সময়ে যারা দেশ পরিচালনা করেছে তারা সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারেনি। দেশকে বদলাবার পরিবর্তে অনেকে নিজেকে বদলিয়েছে।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনীতির শ্লোগানটা যদি সত্যিই এরকম হয়ে থাকে যে, ‘আমার চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ তাহলে দেশেরটাই বড় করে দেখার কথা ছিল। কিন্তু রাজনীতিকরা তাদের কর্মকাণ্ডে এটা বাস্তবে প্রমাণ করতে পারেননি।
ডিআরইউ‘র সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের পরিচালনায় এ ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
জামায়াত আমির সাংবাদিকদের সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার মত পবিত্র দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে বলেন, সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বাকি তিনটা স্তম্ভ সমাজকে ‘ফোর ডিভিশনে’ দেখে না। সোসাইটির দুই ধরণের স্টেকহোল্ডাররা এটা দেখেন। একটা অবশ্যই সাংবাদিকরা, আরেকটা রাজনীতিকরা দেখেন। এই দুইটিতে যদি স্বচ্ছতা ও ভাল বোঝাপড়া থাকে, তাহলে একটি সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কিন্তু এই দুই জায়গার যে কোন একটিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি হলে সে সমাজ খুড়িয়ে খুড়িয়ে সামনের দিকে যায়। হামাগুড়ি দিয়ে যায়, দৌড়ে সামনের দিকে যেতে পারে না। বাংলাদেশের অবস্থা বাস্তবে এটিই হয়েছে। এ অবস্থায় রাজনীতিবিদদের অবশ্যই আত্মসমালোচনার প্রয়োজন। তার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদেরও বুক টান করে দাঁড়ানো দরকার।
তিনি বলেন, বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদ একটা ইতিহাস রচনা করে গিয়েছিলেন। তিনি স্বৈরাচার আয়ুবের কথা ও নির্দেশনা শোনেননি। এজন্য ইতিহাসে একজনই মাহবুব মোর্শেদ স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার কথা বাকি বিচারকরা শুনলে বিচার অঙ্গন নিয়ে কথা বলার কেউ সাহস করতেন না। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও এমন উজ্জ্বল উদাহরণ সমাজে রয়ে গেছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমির বলেন, আমরা কোন ভাল কাজ করলে আপনারা আমাদের প্রশংসা করবেন কিনা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু সমালোচনা করতে ভুলে যাবেন না। আপনার সমালোচনা আপনার ভাষা ও কৌশলে করুন। তবে সব কিছুর উর্ধ্বে আমরা যেন দেশের স্বার্থকে যেন বিবেচনায় রাখি। তাহলে এই সমালোচনা আমাদের সংশোধন এবং পরিমার্জনে সহযোগিতা করবে।
তিনি বলেন, আমরা ভুলের উর্ধ্বে নই। আপনারা দর্পণ হয়ে থাকলে আপনাদের কাছেই আমাদের ভুল ধরা পড়বে। এটি সবার জন্যই হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, সংবাদপত্রের দুটি দিক থাকে, একটি নিউজ আরেকটি ভিউজ। নিউজটা অবিকল ডেলিভারি দেন, আর ভিউজে যা ইচ্ছা তুলে ধরুন। আপনারটা যে পছন্দ করবে সে গ্রহণ করবে, আর যে পছন্দ করবে না সে গ্রহণ করবে না। কিন্তু নিউজের পরিবর্তন করা হলে বক্তব্য প্রদানকারীর ওপর সুবিচার হয় না। এরকম অবিচারের শিকার অনেকে এমনকি আমিও মাঝেমধ্যে হই। কিন্তু সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কায় আমরা অনেক সময় হজম করে যাই। তবে আমাদের শুধু মন্দ দিক নয়, ভাল দিকও তুলে ধরুন। তাহলে ভালটা দেখে কেউ চাইলে উদ্বুদ্ধ হবে আর খারাপটা দেখে পরিণতি চিন্তা করে সতর্ক হবে। এরমধ্যে দিয়ে একটা ভাল সমাজ গঠন হবে। আমরা একটা মানবিক সমাজ দেখতে চাই
পাঠকের মতামত